বাংলাদেশ রোড ট্র্যান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল- ১ এর উপপরিচালক তৌহিদুল হোসেনের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় না এনে কর্তৃপক্ষ তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এসব বিষয় নিয়ে শ্রমিক লীগের একটা পক্ষ রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নেমেছে।
ফলে বিআরটিএর পক্ষ হয়ে রাস্তায় নেমেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের একটি গ্রুপ। একই সংগঠনের দায়িত্বশীল এক নেতা বিষয়টিকে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বলে দাবি করছেন। পরস্পরকে দুষছেন উভয় পক্ষ। তবে বিআরটিএ’র পক্ষে যারা রাস্তায় নেমেছে তাদেরকে দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খোকন। এমনকি তারাও ওই অপকর্মের অংশীদার বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা যায়, থ্রী হুইলার অটোরিক্সা নীতিমালা ২০০৭ লঙ্ঘন করে, মোটা অংকের ঘুসের বিনিময়ে অতিরিক্ত অটোরিক্সা নিবন্ধন দিয়েছে বিআরটিএ, এমন অভিযোগ তুলে অতিরিক্ত নাম্বার বাতিল চেয়ে বিআরটিএ চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালকের বরাবরে গত ২৭ এপ্রিল একটি আবেদন করেন, চট্টগ্রাম অটোরিক্সা অটোটেম্পু শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন। এই বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অপকর্ম ধামাচাপা দিতে তরিঘরি করে মেয়াদোত্তীর্ণ ১৫১ টি অটোরিক্সা স্ক্র্যাপ করে বিআরটিএ। অভিযোগ উঠে সেখানেও প্রতিটি গাড়ি স্ক্র্যাপ করার জন্য ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা ঘুস আদায় করা হয়েছে। যারা ঘুস দিতে চাননি তাদেরকে নানাভাবে নাজেহাল করেছেন বিআরটিএ’র দালাল- অফিসার সিন্ডিকেট।
৩ লাখ টাকা ঘুস নিয়েও চুক্তি মোতাবেক কাজ করেনি এবং টাকাও ফেরৎ দেয়নি এমন অভিযোগ তুলে বিআরটিএ’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন রিয়াজ নামের এক সিএনজি মালিক। পরে সেই মালিক অন্য আরেকটি অটোরিক্সা স্ক্র্যাপ করতে গেলে তাকে নানাভাবে হয়রানির পর ৭ লাখ টাকার মৌখিক চুক্তিতে তার গাড়িটি স্ক্র্যাপ করলেও টাকা পরিশোধ না করায় তাকে স্লীপ (স্ক্র্যাপ ডকুমেন্টস) দেয়া হয়নি। এমনকি তাকে মারধর করে, ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নৌযার অভিযোগ উঠে। এই ব্যপারে আদালতে মামলা করতে গেলে মামলা না নেয়ায় জেলা প্রশাসকের বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
গত ১১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস পালনের জন্য চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক লীগের প্রস্তুতি সভায় সভায় যোগ দেয়ার সময় নগরীর দোস্ত বিল্ডিং এলাকায় এক শ্রমিক নেতার উপর অতর্কিত হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় স্থানীয় কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন আহত শ্রমিক নেতা মো. ফারুক হোসেন। জিডিতে বলা হয়েছে বিআরটিএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় ওই সংস্থার এক কর্মকর্তার মদদে এই হামলা করা হয়েছে। ওই হামলার প্রতিবাদে ১২ জুন দোস্ত বিল্ডিং এর সামনে প্রতিবাদ সভা করে চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক লীগ। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
বিআরটিএ’র পক্ষ নিয়ে গত ১৩ জুন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির ব্যানারে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। জেলা কমিটির সভাপতি মো. ইউছুফের সভাপতিত্বে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি উজ্জল বিশ্বাস, মো. মোশাররফ, মো. বাদশা, মো. নুরুল বশর, মো. এরশাদ, মো সাইফুল, মো ছবুর, মো রাসেল, মো আব্বাস আলী। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অটোরিকশা শ্রমিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি মো. ফোরকান, শ্রমিক লীগ নেতা আহমদ উল্লাহ কালু, গোলাম রাব্বানী, কামাল উদ্দিন, আব্দুল মতিন রুবেল।
শহর এলাকায় এধরণের অনুষ্ঠান আয়োজনকে গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মো. বেলাল হোসেন। এবং খুব শীঘ্রই কেন্দ্রের সাথে আলোচনা করে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এব্যপারে চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস পালনের জন্য প্রস্তুতি সভা আহবান করেছিলাম গত ১০ জুন। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সেখানে এসেছে। কিন্তু ফারুক হোসেন নামের একজন শ্রমিলীগ নেতা সেই সভায় যোগদানের জন্য দোস্ত বিল্ডিংয়ের সামনে এলে একদল দুর্বৃত্ত তার উপর হামলা চালায়। পরে তিনি কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। সেখানে বিআরটিএ’র এক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা সেই হামলার প্রতিবাদে এবং ওই অপসারণ দাবি করে প্রতিবাদ সভা করেছি। এতে যদি কারো খারপ লাগে, বা দুর্নীতিবাজের পক্ষে অবস্থান নেয় তা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি বিআরটিএ অফিসে এর আগেও সেবপ্রার্থীদের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে ওই কর্মকর্তা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন শ্রমিকবান্ধব নেত্রী। নেত্রীর বিচক্ষণতা ও শ্রমিকদের ঘামের বদৌলতেই তিনি আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। তাই কোন শ্রমিকের উপর অন্যায় অবিচার করা হলে বঙ্গবন্ধুকণ্যার প্রতিনিধি হয়ে আমরা প্রতিবাদ জানাবো।
এব্যপারে চট্টগ্রাম অটোরিক্সা অটোটেম্পু শ্রমিক লীগের (রেজি নং চট্ট-১৪৬৯) সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, বিআরটিএ’র অনিয়মের বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ করেছি, আমার অভিযোগ সত্য প্রমানিত না হলে বিআরটিএ আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যারা আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন তারা মুলত বিআরটিএর চিহ্নিত দালাল, তাদের সাথে চট্টগ্রাম বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক তৌহিদুল হোসেনের সাথে গভীর সখ্যতা রয়েছে। বিআরটিএ ও দালাল চক্রের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে হকার ও জেলে শ্রমিকদের ভাড়া করে মানববন্ধন করছে কতিপয় ব্যক্তি। এসময় বিআরটিএ পেশাদার দালালরা সাথে ছিল, তাছারা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ মহানগর কমিটির কোন নেতৃবৃন্দ তা জানেন না। জেলা কমিটির এক নেতা তিনি সিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের একজন চিহ্নিত দালাল।
বিআরটিএর পক্ষে অবস্থান নিয়ে রাস্তায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করার সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা জানতে বাংলাদেশ রোড ট্র্যান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক শফিকুজ্জামন ভুঁঞার মোবাইলে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা দিয়েও কোন সাড়া না পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এসব ব্যপারে বাংলাদেশ রোড ট্র্যান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল ১ এর উপ পরিচালক তৌহিদুল হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা দিয়েও কোন সাড়া না পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।