জামালপুরের বকশীগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের নির্দেশে খুন করা হয় নির্ভিক সাংবাদিক একাত্তর টিভি’র উপজেলা সংবাদ সংগ্রাহক ও বাংলা নিউজের জেলা প্রতিনিধি গোলাম রব্বানীকে। খুন করার আগে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহিনা বেগম ও সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর দফায় দফায় বৈঠক হয় বলে সুত্র জানায়। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে খুরে পরিকল্পনা থেকে অনেক নেতাকর্মী সরে যান। ফলে সৃষ্টি হয় দলীয় কোন্দল। এসকল সুত্র মারফত খবর পেয়ে সাংবাদিক নাদিম লাইভে এসে তার জীবনের নিরাপত্তা চান। তার পরও তার শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে তাকে খুন হতে হয় নাদিমকে। খুনি চক্রের সাথে মদদ দিয়েছেন কতিপয় সাংবাদিকও। অনুসন্ধানে এমন তথ্যও বেড়িয়ে এসেছে। সাংবাদিক খুনের পিছনে রয়েছে এক অদৃশ্য বড় ভাইয়ের ইঙ্গিত।
পুলিশ ও স্থানীয় সাংসদ বলেছেন, সাংবাদিককে হত্যার উদ্দেশ্যে মারেনি। সাংবাদিক সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে মৃত্যু হয়। তাহলে কি সাংবাদিক খুনের ঘটনা “ নিছক দূর্ঘটনা” ?
নিহতের স্বজন এবং স্থানীয়রা এমনটি জানিয়েছেন সাংবাদিক নাদিমকে খুনের পরিকল্পনা তাদের দীর্ঘদিনের। ঘটনার গভীরে পুলিশ কতটা যাবে বা যেতে পারবে তা তদন্তকারী কর্মকর্তা আন্তরিকতারই বলে দিবে। অন্যদিকে এজাহারভুক্ত অধিকাংশ আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় নিহতের স্বজনরা এখনো নিরাপত্তা শংকা প্রকাশ করেছেন। তদন্তের মাধ্যমে হত্যার নেপথ্যদের খুজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি নিহতের স্বজনদের।
গত কয়েক মাস আগে “বকশীগজ্ঞ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম রাজাকারের সন্তান” সাংবাদিক নাদিম এমন খবর প্রকাশ করলে শাহিনা বেগমের ক্যাডার ধারা হামলার শিকার ও হত্যার হুমকি দেয়া হয় সাংবাদিক নাদিমকে।
এসময় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় ডায়রী এবং ফেইজবুক লাইভে এসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জীবনের নিরাপত্তা চায় নাদিম। এরপর স্থানীয় সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রকাশ করেন সাংবাদিক নাদিম। এতেও সে খুনসহ নানা ধরনের হুমকির শিকার হয়।
সন্ত্রাসীদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৪ জুন বুধবার রাত ১০ টায় বকশীগজ্ঞ শহরের পাটপট্টি এলাকায় হামলার শিকার হয় সাংবাদিক নাদিম। হামলায় মারাত্বক আহত নাদিম কে প্রথমে জামালপুর সদর হাসপাতাল এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ১৫ জুন বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বকশীগজ্ঞ এলাকায়।
এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের বিশ্বাস মাহমুদুল আলম বাবুর মত অজপাড়াগায়ের একজন ইউপি চেয়ারম্যান কখনই একজন সাংবাদিকদের শহরের ভিতর প্রকাশ্যে খুন করতে পারে না। আর আওয়ামীলীগের দলীয় সুত্র বলছে উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতারা এনিয়ে আলোচনা করতে শোনেছি। আওয়ামীলীগের ত্যাগী ও নিরপেক্ষ নেতারা নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, হাইবিট নেতারা খুনের ঘটনায় জড়িত রয়েছে।
তারা বলছেন উপজেলা আওয়ামীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করার জন্যই তার একনিষ্ট অনুসারী বাবু চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করানো হয়েছে সাংবাদিক নাদিম কে। এ বিষয়ে যায়যায়দিন এর সাথে কথা হয় বকশীগজ্ঞে এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজন এবং নিহতের স্বজনদের সাথে। এ বিষয়ে বকশীগজ্ঞ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জুমান তালুকদার বলেন, বকশীগজ্ঞ উপজেলা সদর থেকে ৮/১০ কিলোমিটার দূরে সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর মত একজন লোকের পক্ষে কখনই সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা করা সম্ভব না।
তিনি জানান, বকশীগজ্ঞ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম রাজাকারের সন্তান সাংবাদিক নাদিম এমন খবর পরিবেশন করায় গত কয়েক মাস আগে সাংবাদিক নাদিমের উপর হামলা করে শাহিনা বেগমের লোকজন। সে সময় তাকে হত্যা হুমকিও দেয়া হয়।
তখন সাংবাদিক নাদিম জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করে এবং ফেইজবুক লাইভে এসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জীবনের নিরাপত্তা চান। তিনি বলেন, কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারা না থাকলে বাবু চেয়ারম্যান নাদিমকে মেরে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারতো না। সেই অদৃশ্য শক্তিই শাহিনা বেগম।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের এক নেতা বলেন, সাংবাদিক নাদিম সব সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। যার কারনে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীরা একত্রিত হয়ে পরিকল্পিত ভাবে তাকে হত্যা করেছে। নিহত সাংবাদিক নাদিমকে ধমানোর জন্য যত প্রকার কৌশল আছে তারা সেটা করে, তাতেও তাকে ধমাতে না পেরে পরিকল্পিত ভাবে তাকে হত্যা করেছে। যার পরিকল্পনা শাহিনার বাসায় হয়েছে। এছাড়াও তাদের ফোনালাপে বহু প্রমান রয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারনা।
উপজেলা ছাত্রলীগ যুগ্ন আহবায়ক শাহ মোহাম্মদ শান্ত বলেন, বাবু চেয়ারম্যান এবং তার ছেলের পক্ষে সাংবাদিক হত্যা করা সম্ভব না। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম তার পালিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে এ হত্যাটি ঘটিয়েছে।
উপজেলা মুত্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড এর সভাপিত সাইদুর রহমান লাল বলেন, বাবু চেয়ারম্যানের শেল্টারদাতা শাহিনা বেগম। এ ঘটনার সুষ্টু তদন্ত হলে সত্য উদঘাটন হবেই।
তবে উপজলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে যায়ায়াদিনকে বলেন, ইতিমধ্যে এ হত্যাকান্ডের হত্যাকারীরা চিহ্নিত, আমার নাম আনা হচ্ছে য়ড়যন্ত্রমুলক ভাবে ।
অন্য্দিকে স্বজনরা বলছেন এজাহার ভূক্ত সব আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় পরিবাবের লোকজন নিরাপত্তা হীনতায় ভূগছেন। তাদের দাবি সব আসামী গ্রেফতারের পাশাপাশি হত্যার নেপথ্য ব্যক্তিদের খুজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক।
এ বিষয়ে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত সম্প্রতি বকশীগজ্ঞে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বলেন, রাজাকার কন্যা শাহিনা বেগম কে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়।
এ খবর আমার বাবা প্রকাশ করেছিল। এরপর তার উপর হামলা করেছিল শাহিনা বেগমের লোকজন। সে সময় আমার বাবা নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছিল। ফেইজবুক লাইভে এসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিল। সে সময় যদি এর বিচার করা হতো তাহলে আজ আমার বাবাকে হত্যাকান্ডের শিকার হতে হতো না।
তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নেপথ্য নির্দেশ দানকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এ বিষয়ে নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী মনিরা বেগম জানান, এজারভূক্ত অধিকাংশ আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় তারা পুরো পরিবার নিরাপত্তা শংকায় আছেন। তিনিও এ হত্যা কান্ডের নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের খুজে বের করার আহবান জানান।
পুলিশ বলছে নিসংস এ হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের ৫ টি টিম কাজ করছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ হত্যাকান্ডে জড়িত যেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রাণী সরকার বলেন, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে আনা হয়েছে। তাদের ইন্টারগেশন করে এ হত্যাকান্ডে জড়িত যারাই থাকুক সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। বাকি আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের ৫ টি টিম কাজ করছে।